ঢাকার আগারগাঁও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হওয়া ৩৯তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায়, লালমণীরহাট থেকে এসেছিল হাতীবান্ধা এসএস মডেল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সাইয়েদুল মোস্তায়িন। সে বানিয়েছে সোশ্যাল হিউম্যানয়েড রোবট। তাঁর রোবটের নাম ‘তারু’। তাঁর স্টলের সামনে দেখা গেল শিক্ষার্থীদের ভিড়। রোবটটি নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের জবাব ইংরেজিতে দিতে পারে।
ঢাকায় এবারই প্রথম এসেছেন কক্সবাজারের কাউখালী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রুবাইদা ও কিরণা চাকমা। উদ্দেশ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় তাদের প্রোজেক্ট সবার কাছে তুলে ধরা। রুবাইদা দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট ও বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করতে তৈরি করেছেন স্বয়ংক্রিয় বাতি। রুবাইদার তার তৈরি প্রোজেক্ট নিয়ে জানান, ‘আমাদের দেশে বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে অনিচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। সড়কবাতি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বাতি এমনকি ঘরের বাতি দিয়েও অনেক বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে প্রতিদিন। এটা বন্ধ করার ভাবনা থেকেই এই উদ্ভাবন।’
ঠিক একই ধরণের চিত্র দেখা যাচ্ছে, পুরো বাংলাদেশ জুড়ে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানারকম বিজ্ঞান প্রোজেক্ট নিয়ে হাজির হচ্ছে বিজ্ঞানমেলাগুলোতে। আমাদের দেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হচ্ছে, সায়েন্স ফেয়ার বা বিজ্ঞান মেলা। বিজ্ঞানমেলাতে কিছুসংখ্যক স্টল নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক নানা তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র, উদ্ভাবনকৃত প্রকল্প প্রভৃতি প্রদর্শন করা হয়। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানে উৎসাহী করার উদ্দেশ্যে নিয়মিত বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে শত শত বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এসব বিজ্ঞান মেলায় বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন আয়োজন এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা চাইলে বিজ্ঞান সম্পর্কিত পেপার, প্রজেক্ট ও পোস্টার বানিয়ে প্রদর্শন করতে পারে।
আমাদের স্কুল কলেজের বাচ্চারা দারুণ সব প্রোজেক্ট করে প্রতিনিয়ত আমাদের চমকে দিচ্ছে। তবে অনেক সময়, প্রোজেক্ট আইডিয়া খুঁজে বের করতে কষ্ট হয়। এক্ষেত্রে খুব সহজেই কাজে আসতে পারে আরডুইনো। আরডুইনো দিয়ে চমৎকার সব প্রোজেক্ট করে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই কেড়ে নিতে পারে সকলের আকর্ষণ। আরডুইনো ব্যবহার করে তৈরি করা যায়, রোবোটিক আর্ম, নানা ধরণের সেন্সরযুক্ত স্বয়ংক্রিয় প্রজেক্ট, এমন কি রিমোট কন্ট্রোলড যন্ত্র! এছাড়া বিজ্ঞান মেলাতে সৃজনশীল কোনো প্রোজেক্ট করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য সবার থেকে এগিয়ে থাকবে আরডুইনো।
আমাদের দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন নিয়মিতই আরডুইনো দিয়ে নানা প্রোজেক্ট তৈরি করছে। প্রিয় পাঠক, নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, আপনি চাইলেই এমন অ্যালার্ম, রোবোটিক আর্ম, রিমোটকন্ট্রোলড যন্ত্র নিজে নিজে তৈরি করতে পারবেন খুব সহজেই আরডুইনো ব্যবহার করে। কী শিখতে ইচ্ছে হচ্ছে? হওয়ারই কথা। কারণ, আরডুইনো ব্যবহার করার জন্য খুব বেশিকিছুর প্রয়োজন নেই। দরকার শুধু শিখতে চাওয়ার খানিক স্পৃহা, একটু পরিশ্রম আর প্রোজেক্ট সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। তাহলেই আপনি আরডুইনোকে সাথে নিয়ে শুরু করতে পারবেন আপনার সৃজনশীলতার অ্যাডভেঞ্চার। আরডুইনোর নানা আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় আরডুইনো প্রতিনিয়তই ব্যবহৃত হচ্ছে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক আরডুইনো সম্পর্কে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় আরডুইনোর আকর্ষনীয় ব্যবহার নিয়ে!
আরডুইনো কী?
আরডুইনো একটি ওপেনসোর্স ইলেকট্রনিক প্লাটফর্ম। এটি তৈরি হয়েছে সহজে ব্যবহারযোগ্য হার্ডওয়ার সফটওয়্যার দিয়ে। কি বোঝার জন্য বেশি কঠিন হয়ে গেল? আচ্ছা, সহজ ভাষায় বলছি – ধরে নিন, আরডুইনো একটি ছোট্ট ইলেকট্রনিক বোর্ড বা মাইক্রোকন্ট্রোলার। যেটাতে কিছু ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি যুক্ত আছে আর সেই বোর্ডটিকে যেন ব্যবহার করা যায়, তাই তাতে রয়েছে উন্মুক্ত সফটওয়্যার। যার কোড কেউ চাইলেই দেখতে পারে, ব্যবহার করতে পারে। আবার কেউ চাইলে একই ধরণের বোর্ড বানাতেও পারে। একারণেই এ কে ওপেনসোর্স বলা হয়েছে, মানে জন্য সকলের জন্য উন্মুক্ত। আরডুইনো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য ধরনগুলো হলো:
ধরন অনুযায়ী এসকল আরডুইনোর ইনপুট এবং আউটপুট পিনের সংখ্যা ভিন্নভিন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া সার্কিটের সাইজ ও জটিলতার ধরণেও পার্থক্য দেখা যায়। সেই সাথে বিভিন্ন ধরণের সক্ষমতায় ও রয়েছে পার্থক্য। তবে শুরু করার জন্য আরডুইনো উনো সঠিক পছন্দ। আরডুইনো শেখার ক্ষেত্রে একদম নতুন শিক্ষার্থী হলে আপনার উচিত আরডুইনো উনো দিয়ে শুরু করা। চাইলে আরডুইনো ন্যানো ও কিনতে পারেন, তবে সেক্ষত্রে একটু অ্যাডভান্স লেভেলের কাজের জন্য আপনার আরডুইনো উনো প্রয়োজন হতে পারে। তাই শুরুতেই আরডুইনো উনো সঠিক পছন্দ। আর আরডুইনো সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকলে, আপনার অবশ্যই উচিত আপনার কাজের ধরণ ও জটিলতা যাচাই করে সঠিক আরডুইনোটি কেনা।
আরডুইনো ব্যবহারের ক্ষেত্র
আরডুইনোকে আপনি বলতে পারেন একটি ছোট্ট কম্পিউটার। যেটাতে নির্দিষ্ট কিছু ইনপুট পেলে, আউটপুট কেমন হবে তা আগে থেকেই ঠিক করে দেয়া হয়। আরডুইনো কাজ করার পদ্ধতি কম্পিউটারের মতোই। এটি, ইনপুট> প্রসেস> আউটপুট নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে থাকে। আরডুইনো ব্যবহার করা হয় –
- বিভিন্ন সায়েন্টিফিক প্রজেক্টে
- প্রোগ্রামিংকে আকর্ষনীয় করে তুলতে
- রোবটিক্সে
- ট্রাফিক লাইট কন্ট্রোলে
- প্রযুক্তির শিক্ষায়
- সৌখিন ইলেকট্রনিক কাজকর্মে
- কোন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের প্রোটোটাইপ ফেজে
- প্রোটোটাইপ এবং খেলনা রোবট তৈরির ক্ষেত্রে
- রিমোট চালিত গাড়ি তৈরীর ক্ষেত্রে
- রিমোট চালিত ড্রোন তৈরি ক্ষেত্রে
- আইওটিতে (IOT)
- স্মার্টহোম তৈরীর ক্ষেত্রে
- ভয়েস নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক বাল্ব বা ফ্যান তৈরির ক্ষেত্রে
আরো নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় আরডুইনো! যেহেতু আরডুইনো সৃজনশীল কাজেও ব্যবহৃত হয়, তাই এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমিত নয়।
শিক্ষার সাথে আরডুইনোর সম্পর্ক
বিভিন্ন কারণে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করা হচ্ছে আরডুইনো। ২১ শতকের পৃথিবীতে সকল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান শিক্ষা পাচ্ছে আলাদা অগ্রাধিকার। আর এই বিজ্ঞান শিক্ষার অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবেই যুক্ত হচ্ছে আরডুইনো। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে STEM Education কে। STEM বলতে বোঝায় Science, Technology, Engineering and Mathematics. শিক্ষার অন্যান্য বিষয়গুলো থেকে STEM রিলেটেড বিষয়গুলোতে গবেষণা ও বিভিন্ন ধরনের চর্চা বেশি হয়। তাই, অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে STEM রিলেটেড বিষয়গুলোর ক্ষেত্রও বড় হয়ে থাকে। STEM Education কে বলতে পারেন ভবিষ্যতের শিক্ষা। কারন Fourth Industrial Revolution বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। তো, সামনের দিনের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে, তাদের অবশ্যই STEM Education এ জোর দিতে হবে। আর সেকারণেই শিক্ষার্থীদের Problem-solving, Logical Reasoning, Challenge Facing ability বা দক্ষতাকে উন্নয়ন করা জরুরি।
যেহেতু, আরডুইনো এই দক্ষতাগুলো উন্নয়নে সক্রিয় ভাবে কাজ করছে, তাই এটি ধীরে ধীরে হয়ে পড়ছে বিজ্ঞান শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে ৫ কারণে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই আরডুইনো শেখা উচিত-
১) আরডুইনো হল আশ্চর্যজনক এবং দারুণ সব প্রোজেক্টের ভিত্তি আপনি যদি,
- রোবট তৈরি
- হোম অটোমেশন প্রকল্প (লাইট, গ্যারেজের দরজা, এমনকি জল দেওয়ার গাছ)
- ভিডিও গেম নিয়ন্ত্রণ করা
- বাদ্যযন্ত্র প্রকল্প (জৈব উপাদান সংযোগ সহ)
- অ্যালার্ম সিস্টেম
ইত্যাদির মতো দারুণ সব প্রোজেক্ট তৈরিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার আরডুইনো শেখা উচিত।
২) আরডুইনো দিয়ে প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি, আপনি যদি প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করে থাকেন এবং প্রোগ্রামিং শেখা আপনার কাছে কাঠখোট্টা টাইপের লাগে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার কাজে লাগবে আরডুইনো। আরডুইনোতে প্রোগ্রামিং যেকোন ভাষায় সম্ভব, তবে আরডুইনো আইডিই (ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট) দিয়ে শুরু করা ভালো। Windows, macOS, Linux এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের জন্য উপযুক্ত সংস্করণগুলি খুঁজে পাবেন। IDE C এবং C++ সমর্থন করে এবং বিভিন্ন হার্ডওয়্যার উপাদান যেমন LED এবং সুইচের জন্য লাইব্রেরি ও এতে যুক্ত থাকে। প্রোগ্রাম সম্পূর্ণ হলে সেটি একটি USB এর মাধ্যমে Arduino বোর্ডে আপলোড করা হয়। এরপর এটি চালানো যেতে পারে এবং এটি ডিলিট না করা পর্যন্ত বোর্ডের মেমরিতে থাকবে। আরডুইনো প্রোগ্রামিং তুলনামূলকভাবে বেসিক, তবে প্রোগ্রামিং এর নিখুঁত বিষয়গুলো বোঝার জন্য আরডুইনো দুর্দান্ত।
৩) অনেকেই যখন প্রথম আরডুইনো ব্যবহার করে, তখন ইলেকট্রনিক্স বা সার্কিট সম্পর্কে কোন ভালো ধারণা থাকে না। কিন্তু শুরু করার জন্য আরডুইনো থেকে ভালো আর কীইবা হতে পারে। কারণ আরডুইনো দিয়ে আপনি কি করছেন বা করতে চাচ্ছেন তা বুঝতে চাইলে আপনাকে সার্কিটের মৌলিক বিষয়গুলো শিখতে হবে। আমাদের আরডুইনো কোর্স আপনাকে এক্ষেত্রে সাহয্য করবে।
আপনি যখন আপনার প্রোজেক্ট সম্পূর্ণ করার জন্যএকটি Arduino এর নিয়ে ঘাটাঘাটি করবেন, তার উপর নির্ভর করে আপনি নতুন ইলেকট্রনিক্স এর ওপর দক্ষতা অর্জন করবেন। আপনি যদি এর আগে কখনও তার, ব্রেডবোর্ড বা সোল্ডারিং বন্দুক পরিচালনা না করে থাকেন তবে এটি শেখার একটি নিরাপদ এবং মজার উপায় আরডুইনো।
শুধু তাই নয়, আপনি অনেকগুলি দুর্দান্ত ইলেকট্রনিক উপাদানগুলির সাথেও পরিচিত হতে পারবেন। বেশিরভাগ Arduino স্টার্টার কিট এলইডি, রেজিস্ট্রর, ক্যাপাসিটর, অ্যাক্সিলোমিটার, মোটর, সুইচ, ডিসপ্লে এবং আরও অনেক কিছু সহ তৈরি হয়।
তাই এগুলোর ধারণা পাবেন সহজেই।
৪) আরডুইনো – কম খরচে দামী শখ। আরডুইনোর শেখার পক্ষে সবচেয়ে বড় পয়েন্টগুলির মধ্যে একটি হল এটি শুরু করা অনেক সহজ। কিছু শখ শুরু করতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। পেইন্টিং, কাঠের কাজ বা ফটোগ্রাফির কথা চিন্তা করুন যেখানে আপনি শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং সরবরাহ কিনতে আপনার পকেট হালকা হয়ে যাবে। বিপরীতভাবে, একটি ভাল আরডুইনো স্টার্টার কিটের দাম অনেক কম, যা আপনার সাধ্যের মধ্যেই।
৫) সৃজনশীলতা, কী ভয় পাচ্ছেন? সৃজনশীল কাজের কথা শুনলেই অনেকে ভয় পেয়ে যান। আসলে সৃজনশীলতা কী ভয়ের কিছু? মোটেই নয়। আপনি হয়তো জানেন না, পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষই তার মতো করে সৃজনশীল। সৃজনশীলতা বলতে বোঝায় মানুষ হিসেবে আমাদের নিজস্বতা। আমাদের প্রত্যেকটি কাজেই আমাদের নিজস্ব ছাপ থাকে, সেটিই সৃজনশীলতা। আরডুইনো ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার সৃজনশীলতা বিকাশ এবং প্রকাশ দুটিই করতে পারবেন।
এবার চলুন দেখে আসি, আরডুইনো কিভাবে শিক্ষার সাথে জড়িত এবং আরডুইনো কাদের জন্য?
- আরডুইনো ব্যবহার শিক্ষার্থীদের Problem Solving Ability কে বৃদ্ধি করে। কারণ আরডুইনো একটি পাজলের অংশ। আরডুইনো কে ব্যবহার করতে হলে, পাজলের বা ধাঁধার সমস্যার সমাধান করতে হবে আগে। কারণ আরডুইনো একটি সিস্টেমের বা যন্ত্রের অংশ। যন্ত্রটাকে শিক্ষার্থী কীভাবে কাজ করাতে চাচ্ছে এবং তাতে আরডুইনোকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সেটার সমধান করতে পারলেই, বোঝা যাবে বাড়ছে শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধান দক্ষতা ।
- আরডুইনো দিয়ে কাজ করতে হলে শিক্ষার্থীর অল্পকিছু প্রোগ্রামিং জানতে হয়। এই প্রোগ্রামিং জ্ঞান দিয়ে ঠিকঠাক লজিক ব্যবহার করে কোড করতে হয় আরডুইনোর ছোট্ট সার্কিট বোর্ডটিকে। আর এটি করতে পারলেই বৃদ্ধি পায় শিক্ষার্থীর লজিক্যাল রিজনিং স্কিল বা যুক্তি দিয়ে ভাবনার সক্ষমতা।
- কোন প্রজেক্ট সম্পন্ন করা মানেই একটি চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করা। আরডুইনো দিয়ে কোন প্রোজেক্ট সফল ভাবে সম্পন্ন করা মানে, যুক্তিগত ও একইসাথে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ব্যবহার করে একটি সমস্যা সমাধান করার মধ্য দিয়ে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা।
আরডুইনো ব্যবহার করার মাধ্যমে একই সাথে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দক্ষতার চর্চা ও বিকাশ হয়। যা ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। আর ঠিক একই কাজটি করা STEM Education এর লক্ষ্য!
আরডুইনো যাদের জন্য
আরডুইনো আসলে সবার জন্য। তবে বিশেষভাবে তাদের জন্য যারা নতুন কিছু শিখতে চান- হতে পারে আপনি একজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা অন্য যেকোনো পেশার মানুষ। আকর্ষণীয় প্রোজেক্ট তৈরি করতে চান, শেখার বিষয়টাকে আকর্ষণীয় করতে চান, প্রযুক্তি ব্যবহার করে সৃজনশীলতার জগতটাকে এক্সপ্লোর করতে চান, এমন সবার জন্যই আরডুইনো।
শিক্ষা ব্যবস্থায় যেভাবে আরডুইনো আপনার উপকারে আসবে
আরডুইনো শুধু শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনেই সাহায্য করে না! শিক্ষাকে শিক্ষার্থীর কাছে করে তোলে আকর্ষণীয়। চলুন দেখে নেয়া যাক, শিক্ষা ব্যবস্থায় কিভাবে আরডুইনো একজন শিক্ষার্থীর উপকারে আসবে-
১। আরডুইনো প্রোগ্রামিং শেখাকে আরো বেশি উপভোগ্য করে তোলেঃ যে শিক্ষার্থী মাত্রই প্রোগ্রামিং শুরু করেছেন, তার জন্য অভিজ্ঞতাটা হয় আরো ভালো! স্বল্প প্রোগ্রামিং নলেজ দিয়েই আরডুইনো বোর্ড প্রোগ্রাম কর যায়। এরপর বোর্ডটি কোনো সেন্সরের সাথে বা ইনপুট-আউটপুট ডিভাইসের সাথে যুক্ত করে দেখতে পারবেন প্রোগ্রামটি সঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা। হাতে নাতে ফলাফল পেলে শেখার আগ্রহ না বেড়ে উপায় আছে, বলুন?
২। ডিজাইন ও আর্কিটেকচারঃ ডিজাইন এবং আর্কিটেকচার নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তাদের প্রজেক্টের প্রোটোটাইপ তৈরি করার জন্য সাহায্য নিতে পারে আরডুইনোর। আরডুইনো ব্যবহার করে তারা তাদের প্রোজেক্টের সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সঠিক বাস্তবায়ন এবং সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারেন খুব সহজেই। শেখার সময় দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে পারলে পরের বিষয় জানার জন্য আগ্রহ বাড়ে শিক্ষার্থীর আর শেখা হয়ে ওঠে আনন্দদায়ক।
৩। তাত্ত্বিক বিষয় প্রমাণে আরডুইনোঃ শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি বহুল ব্যবহৃত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্যও সুবিধা। দাম সামর্থের মধ্যে হওয়ায় এটি ব্যবহার করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তৈরি করতে পারে বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক যন্ত্র। এভাবে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন এর বিভিন্ন নীতি প্রমাণের ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আরডুইনো বেশ কাজে আসে। চোখের সামনে তত্ত্ব প্রমান দেখলে, স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীর কাছে শেখা হয়ে উঠবে আরো আকর্ষণীয়!
৪। কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তি নিয়ে শিক্ষাঃ কৃষি ক্ষেত্রে, জমিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেচ প্রদানের জন্য বিভিন্ন সেন্সর যুক্ত করে ব্যবহার করা যেতে পারে আরডুইনো। সেন্সর যখনই ফসলের জমিতে পানির অভাব বুঝতে পারবে তখনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোটর চালু হয়ে জমিতে সেচ দিবে। এমন কৃষিভিত্তিক আরো সব প্রজেক্ট তৈরির আগ্রহ ও ভাবনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আরডুইনো দারুণ কাজের!
৫। রোবোটিক্স নিয়ে পড়াশোনাঃ রোবটিক্সে আরডুইনো দিয়ে রোবট আর্ম বা হাত তৈরি করা যায়। করা যায় আরো নানা প্রজেক্ট। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ, যাদের একটি হাত নেই বা হাতে কোন ধরনের সমস্যা আছে, তারা এ ধরনের রোবট আর্ম ব্যবহার করতে পারেন। নিজেদের তৈরি সফল প্রজেক্ট কারো কাজে আসছে দেখতে পেলে, শিক্ষার্থীর জানার আগ্রহ বাড়বে বহুগুণ! শিখন প্রক্রিয়া হবে আনন্দদায়ক!
কী ভাবছেন? যে যন্ত্র দিয়ে, এতকিছু করা যায়, তা নিশ্চয় খুব দামী কিংবা পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না! আপনার ভাবনাটি আসলে মোটেও ঠিক নয়। বাংলাদেশে আগ্রহী শিক্ষার্থী সহ সকলেই যেন চাইলেই ভালো মানের আরডুইনো কিনতে পারে, তাই টেকশপ বাংলাদেশ নিয়ে নিয়ে এসেছে বিভিন্ন ধরণের ও বিভিন্ন মূল্যের আরডুইনো একদম আপনার দুয়ারে। আর সেই সাথে আরডুইনো সম্পর্কে আরো জানতে ও আরডুইনোর Basic থেকে Advanced পর্যন্ত প্রত্যেকটি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে এনরোল করতে পারেন পাই ল্যাবস একাডেমির Arduino and Embedded System কোর্সে। কোর্সে এনরোল করতে ভিজিট করুন এখানে।